শুভ সংবাদ ও আমন্ত্রণ ‘হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা (সা.)-এর আরও একটি মহান ভবিষ্যদ্বাণীর পূর্ণতা’


প্রিয় ভ্রাতা ও ভগ্নি,

আস্‌সলামু আলাইকুম ওয়া রহ্‌মাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।

হযরত রসূলে করীম মুহাম্মদ মুস্তফা (সা.)-এর ভাবষ্যদ্বাণী অনুযায়ী হযরত ইমাম মাহ্‌দী (আ.) যথাসময়ে (হিজরী চতুর্দশ শতাব্দীতে) এবং যথাস্থানে (দামেষ্কের পূর্ব দিকে নদীর তীরবর্তী স্থানে) আবির্ভূত হয়েছেন।

এটি নিঃসন্দেহে উম্মতে মুহাম্মদীয়ার জন্য তো বটেই, সমগ্র বিশ্ববাসীর জন্যও একটি ‘মহান শুভ সংবাদ’। পবিত্র কুরআন ও হাদীস হতে জানা যায় যে, মুহাম্মদী উম্মতের মধ্য থেকে মুসলমানদের নেতৃত্ব দানকারী খোলাফায়ে রাশেদীন, প্রতি শতাব্দীর শিরোভাগে মোজাদ্দেদ এবং আখেরী যামানায় ইমাম মাহ্‌দী ও প্রতিশ্রুত মসীহ্‌-এর আগমনের প্রতিশ্রুতি রয়েছে। আখেরী যামানার লক্ষণসমূহ্‌ সব প্রকাশ পেয়েছে। বিশ্বব্যাপী সর্বগ্রাসী চারিত্রিক অধঃপতন, পিতা-মাতার অবাধ্যতা, নাচ-গানের প্রসার, মারামারি, হানাহানি, নিত্য নতুন যানবাহনের আবিস্কার, যুদ্ধ-বিগ্রহ এবং মানবিক মূল্যবোধের অবক্ষয় চরমে পৌঁছে গেছে। উম্মতে মুহাম্মদীয়া বহু দলে-উপদলে বিবক্ত হয়ে পরষ্পর কলহ-কোন্দল এবং যুদ্ধ-বিগ্রহের ভয়াবহ আগুনে নিপতিত। এ সকল সমস্যার সমাধান হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী আগমনকারী হযরত ইমাম মাহ্‌দী (আ.)-কে মান্য করার মধ্যে নিহিত আছে।

১৮৮২ ইং সনে হযরত মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী আল্লাহ্‌ তা’লার কাছ থেকে প্রত্যাদিষ্ট হয়ে সংস্কারক (মুজাদ্দিদ) হবার সুসংবাদ লাভ করেন এবং ১৮৮৯ ইং মোতাবেক ১৩০৬ হিজরী (অর্থাৎ হিজরী চতুর্দশ শতাব্দীর প্রারম্ভে) আল্লাহ্‌ তা’লার সুস্পষ্ট নির্দেশে প্রতিশ্রুত মসীহ্‌ এবং প্রতিক্ষীত ইমাম মাহ্‌দী হওয়ার দাবী করেন এবং বয়’আত গ্রহণ আরম্ভ করেন। তাঁর দাবীর সত্যতার প্রমাণ স্বরূপ পবিত্র কৃরআন ও হাদীসের ভিক্তিতে বহু নিদর্শনাবলীর মধ্যে একই রমযান মাসে (১৮৯৪ খৃষ্টাব্দে পূর্ব গোলার্ধে ও ১৮৯৫ খৃষ্টাব্দে পশ্চিম গোলার্ধে) চন্দ্র ও সূর্য গ্রহণের ঘটনা বিশেষভাবে উল্ল্যেখযোগ্য। তাছাড়া ভয়াবহ প্লেগের প্রাদুর্ভাব, রাশিয়ার জারের পতন, প্রথম ও দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের মহা প্রলয়ংকারী ঘটনাবলী, ঘন ঘন বন্যা প্লাবন ও ভূমিকম্প এবং বঙ্গ-ভঙ্গ রদ ঘোষণার মাধ্যমে বাঙ্গালীদের বিশেষতঃ তৎকালীন হিন্দু সম্প্রদায়ের মনঃসন্তুষ্টি সাধনের ঘটনাগুলো উল্ল্যেখযোগ্য।

হযরত ইমাম মাহ্‌দী (আ.)-এর আগমন সংবাদ কোন মামুলি বার্তা নয়। কেননা হযরত মুহাম্মদ (সা.) নির্দেশ দিয়েছেন,

ইমাম মাহ্‌দী (আ.)-এর খবর পেলে বরফের উপর হামাগুড়ি দিয়েও যদি যেতে হয় যাবে, তাঁর বয়’আত গ্রহণ করবে এবং তাঁকে আমার সালাম পৌঁছাবে। (সুনান ইবনে মাজা, মসনদ আহ্‌মদ বিন হাম্বল দ্রষ্টব্য)

আমরা অত্যন্ত বিনয়ের সঙ্গে ইমাম মাহ্‌দী (আ.)-এর আগমনের শুভ সংবাদ আপনার কাছে পৌঁছে দিচ্ছি। আল্‌হাদুলিল্লাহ্‌।

ইমাম মাহ্‌দী (আ.) লুদ (লুধিয়ানা) নামক স্থানে খৃষ্টানদিগকে তর্ক যুদ্ধে পরাজিত করেন এবং ইসলামের বিজয়ের সূচনা করেন। তাঁর অনুসারীগণ তাঁর খেলাফতের নেতৃত্বাধীনে, হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা (সা.)-এর পূর্ণ আনুগত্যে, বিশ্ববাসীকে ইসলামে দীক্ষিত করার জন্য সফলতার সংগে বিভিন্ন খৃষ্টান প্রধান দেশসহ বিশ্বের শতাধিক (বর্তমানে ১৮৬) দেশে তৌহিদের ঝান্ডা, অর্থাৎ “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুমম্মাদুর রাসূলুল্লাহ্‌” এর ঝান্ডা হাতে করে শান্তি পূর্ণ সংগ্রামে অবতীর্ণ হয়ে ইসলামের প্রচার অভিযানে রত আছেন।

আপনি কি একজন দায়িত্বশীল মুসলমান হিসেবে হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর হুকুম পালন করছেন, হযরত ইমাম মাহ্‌দী (আ.)-কে গ্রহণ করেছেন? আপনি কি তাঁকে হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর সালাম পৌঁছিয়েছেন? আপনি কি ইমাম মাহ্‌দী (আ.)-এর নেতৃত্বে দল-উপদলগত ঝগড়া-ফ্যাসাদ বিসর্জন দিয়ে ইসলাম প্রচার অভিযানে অংশ নিয়েছেন? কিয়ামতের দিন প্রশ্ন করা হলে আপনি কি উত্তর দেবেন? তখনতো কোন আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, পীর, মোর্শেদ মৌলানা ও সমাজ কাজে আসবে না। আপনার নিজের ঈমান ও আমলের ফল নিজেকেই ভোগ করতে হবে।

পবিত্র কুরআন, হাদীস ও ইতিহাস থেকে জানা যায় যে, সমসাময়িক আলেমগণ ও তাদের শিষ্যরা আল্লাহ্‌ তা’লার প্রেরিত পুরুষদের সহজে মানতে চায় না বরং তারা বিরোধীতা করে, ঠাট্টা-বিদ্রুপ করে এবং অত্যাচার ও উৎপীড়নের পথ অবলম্বন করে, ফলে তারা আল্লাহ্‌ তা’লার ক্রোধে নিপতিত হয়। আমরা সর্বশ্রেষ্ঠ নবী খাতামান নবীঈন হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা (সা.)-এর উম্মত। আমরাও কি আল্লাহ্‌ তা’লার প্রেরিত পুরুষ ইমাম মাহ্‌দী (আ.)-কে অগ্রাহ্য করে কিংবা তাঁর বিরোধীতা করে আ’দ, সামূদ এবং ইহুদীদের মত আল্লাহ্‌ তা’লার গযবে পতিত হব? আমরা কি পূর্বের দৃষ্টান্তগুলো হতে কোনই শিক্ষা গ্রহণ করবো না? (নাউযুবিল্লাহে মিন যালিকা)

পবিত্র কুরআনের সূরা যুমার-এর শেষ রুকুতে বলা হয়েছে যে,

সত্য প্রত্যাখ্যানকারীদেরকে দলে দলে জাহান্নামের দিকে হাকিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে। যখন তারা তার কাছে উপস্থিত হবে তখন এর প্রবেশ দ্বার খুলে দেয়া হবে এবং জাহান্নামের রক্ষীরা তাদেরকে জিজ্ঞাসা করবে, তোমাদের মধ্য থেকে কি তোমাদের রসূলগণ আবির্ভূত হন নাই যাঁরা তোমাদের কাছে তোমাদের প্রতিপালকের আয়াত সমূহ আবৃত্তি করতেন এবং এ দিবসের সাক্ষাত সম্বন্ধে তোমাদেরকে সাবধান ও সতর্ক করতেন? তারা বলবে, অবশ্যই এসেছিলেন। বস্তুত সত্য প্রত্যাখ্যানকারীদের প্রতি শাস্তির কথা বাস্তবায়িত হয়েছে। অতঃপর তাদেরকে বলা হবে, জাহান্নামে প্রবেশ করো এতে দীর্ঘকাল অবস্থানের জন্য, ঔদ্ধত্য প্রকাশকারীদের অবস্থান কতই না নিকৃষ্ট!

এর পরের আয়াতে বর্ণিত বিষয়টি আল্লাহ্‌ তা’লার নেক বান্দাদের জন্য। সেদিকেও আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

যারা তাদের প্রতিপালককে ভয় করতেন, তাদেরকে দলে দলে জান্নাতের দিকে নিয়ে যাওয়া হবে তারা জান্নাতের দ্বার প্রান্তে উপস্থিত হলে জান্নাতের প্রহরীগণ তাদেরকে বলবে, তোমাদের প্রতি সালাম, তোমরা আনন্দিত হও এবং স্থায়ীভাবে অবস্থানের জন্য জান্নাতে প্রবেশ করো।

এর পরের দু’টি আয়াত আরও তাৎপর্যবহ। এতে জান্নাতের একটি সুন্দর চিত্র আমাদের সম্মুখে তুলে ধরা হয়েছে। ঐ সুন্দর ও মনোরম দৃশ্য উপলদ্ধি করতে চেষ্টা করুন। (দ্রষ্টব্য: সূরা যুমার-এর শেষ রুকু) দু’টি প্রবেশ দ্বারের কথাই আপনার সামনে তুলে ধরলাম। কোনটিতে আপনি প্রবেশ করবেন, সে সিদ্ধান্তটি একান্ত আপনার।

ইসলামের এই পূনর্জাগরণের সন্ধিক্ষণে খাতামান নবীঈন হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা (সা.)-এর নির্দেশে ও পূর্ণ আনুগত্যে হযরত ইমাম মাহ্‌দী (আ.)-এর নেতৃত্বে শান্তিপূর্ণ জিহাদ দ্বারা বিশ্বব্যাপী ইসলাম প্রচার অভিযানে অংশ নিবার জন্য আমরা আপনাকে আন্তরিক আমন্ত্রণ জানাচ্ছি।

আল্লাহ্‌ তা’লা আপনার সহায় হোন। সংবাদ পৌঁছানো আমাদের কর্তব্য, হেদায়াতের মালিক আল্লাহ্‌ তা’লা। হযরত খাতামান নবীঈন মুহাম্মদ মুস্তফা (সা.)-এর উপর শত কোটি দরূদ ও সালাম।

হযরত ইমাম মাহ্‌দী (আ.) বলেছেন,

চারিদিকে আহবান জানানোই আমাদের প্রধান কাজ। যার ফিৎরত নেক, সে পরিণামে অবশ্যই আসবে।

প্রাপ্ত সুত্র: কেন্দ্রীয় বাংলা ডেস্ক, লন্ডন, ইউকে